রূপগঞ্জ বার্তা ডেস্কঃ
আজ মঙ্গলবার বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ, ইংরেজী ২৫শে মে ২০২১ সাল। সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবির কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলা সাহিত্য-সংগীতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি গেয়েছেন মানবতার জয়গান। নজরুলের লেখনী থেকেই আমরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং বাঙালির মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেছেন, জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃত্ কবি নজরুল ছিলেন বাঙালি জাতির রাজনৈতিক মুক্তি-সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তার সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের বাণী।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম বেঁচে ছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে মাত্র ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর।তারপরও বাঙালির জীবনে নজরুলের দিগন্তবিস্তারি প্রভাব! কেন? গবেষকরা বলছেন, সাহিত্য রচনার সময়কালের ব্যাপ্তি যাই হোক না কেন নজরুলের প্রভাব শতাব্দী পেরিয়ে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
মানবতাবাদী কবি নজরুল একুশ শতকে এসে হয়ে উঠেছেন মনুষ্যত্বের কবি। যখন দেশে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার বাড়ছে। তার বিপরীতে, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি নজরুল চর্চার বিকল্প নেই।
কবি কাজী নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধূমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্র্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। সে কারণে ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেলজুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।
১৯৭৩ সালের এই দিনে ভোর হতেই আনন্দ হাসি গানে ভরে উঠেছিল বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ধানমন্ডির বাড়ি। সারাদিনে সমাগম ঘটেছে হাজার হাজার মানুষের। সেদিন নিবেদিত হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধায় সর্বহারার কবি নজরুলের প্রতি ভালবাসা। ১৯৭৩ সালের এইদিন ছিল ৭৪তম জন্মবার্ষিকী। সকালেই তার বাড়িতে উত্তলিত হয়েছিল জাতীয় পতাকা। কবিকে পড়ানো হয় ধুতি আর রাজশাহী সিল্কের ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি। বাড়ির অঙ্গনে তৈরি করা হয়েছে মন্ডপ।সারাদিন ধরে সেখানে চলেছে গান আর আবৃত্তি অনুষ্ঠান।প্রবেশপথে নির্মাণ করা হয়েছিল তোরণ। সকালে বসেছে বাংলাদেশ ও ভারতীয় শিল্পীদের গানের আসর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে দেখতে গিয়েছিলেন রাত প্রায় সাড়ে আটটায়। এর আগে সকালে তার পক্ষ থেকে অসুস্থ কবিকে মাল্যভূষিত করা হয় এবং ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হয়। এবং একজন শিল্পী নজরুল সংগীত গেয়ে শোনান। এই সময়ে অভিমুখে মাঝে মাঝে কবির মুখ হাসিতে ভরে ওঠে এবং তিনি বারবার বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকাতে থাকেন। বঙ্গবন্ধু পরম শ্রদ্ধায় কবির গায়ে হাত রাখেন। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে শিল্পীরা আবার কারার ঐ লৌহ কপাট গানটি গেয়ে শোনান। রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী দুপুর সাড়ে বারোটায় কবিকে মাল্যভূষিত করেন। তিনি দুটি ফুলের তোড়া দুই প্যাকেটে উপহারসামগ্রী নিয়ে যান। রাষ্ট্রপতি কবির রোগ মুক্তি কামনা করেন। সকালে দেখতে গিয়েছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত।এরপর একে একে গিয়েছিলেন ইউসুফ আলী, মনোরঞ্জন ধর আব্দুল আজিজ,জেনারেল ওসমানী প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু কবির বাসা ত্যাগ করে আসার সময় উপস্থিত শিল্পীরা আমি দ্বার খুলে আর ডাকিব না বিখ্যাত নজরুলগীতি পরিবেশন করেছিলেন।
তিনি বেঁচে ছিলেন ৭৭ বছর। জন্মের পর থেকে মাত্র ৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন কাটিয়েছেন। এর মধ্যে সাহিত্য রচনার কাল ছিল মাত্র ২৪ বছর।তারপরও বাঙালির জীবনে নজরুলের দিগন্তবিস্তারি প্রভাব! কেন? গবেষকরা বলছেন, সাহিত্য রচনার সময়কালের ব্যাপ্তি যাই হোক না কেন নজরুলের প্রভাব শতাব্দী পেরিয়ে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
মানবতাবাদী কবি নজরুল একুশ শতকে এসে হয়ে উঠেছেন মনুষ্যত্বের কবি। যখন দেশে দেশে সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় কুসংস্কার বাড়ছে। তার বিপরীতে, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি নজরুল চর্চার বিকল্প নেই।