রূপগঞ্জ বার্তা ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রভাবশালী এক পরিবারের দাপটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে দুই গ্রামের প্রায় শতাধীক জমির মালিক। উপজেলার টেকনোয়াদ্দা ও পশ্বি মৌজায় ৪০ বিঘার উপরে জমি আংশিক ক্রয় করে পুরো দখলে নেয়।
এসব জমির বেশিরভাগই মালিকানা বিতর্কিত। যার কোনটিতে মালিক ভুয়া, কোনটির ওয়ারিশ রেখেই আংশিক ক্রয় করে পুরো জমি দখলে নিয়েছে। ভুক্তভোগী জমি মালিকদের দাবী, বৈধ ওয়ারিশ রেখে, কিংবা ৩ ভাইয়ের জমি থেকে ১ ভাইয়ের জমি ক্রয় করে পুরো জমি জোরকরে দখলে নিয়ে নেয়। প্রতিবাদ করলেই বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহীনি ও ঢাকা থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতো। সাবেক সরকারী কর্মকর্তার পরিবার বিধায় প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে নানা ভাবে জমির মালিকদের চাপ প্রয়োগ করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে ওই পরিবারটি। এমনকি ওই প্রভাবশালী পরিবারের আচরনে ক্ষুব্ধ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনও। অহেতুক অন্যায় ভাবে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে জমির মালিকদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে বিব্রত অবস্থায় পড়ছে পুলিশ প্রশাসনও।
জানা গেছে, রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা নাজমুল হক। নাজমুল একটি বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপটেন হিসেবে। ছিলো ক্ষমতা আর দাপট। তাই প্রভাব খাটিয়ে নামেমাত্র মূল্যে জমিক্রয় কিংবা ভেজাল ও বেদখল জমি আংশিক ক্রয় করে পুরো জমি দখলে নেয়াই ছিলো তার সম্পদের পাহাড় গড়ার হাতিয়ার। সরকারী কর্মকর্তা থাকাকালীন নামে বেনামে শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার টেকনোয়াদ্দা ও পর্শি মৌজা এলাকাসহ আশ-পাশে ক্রয় করেন প্রায় ৪০ বিঘার অধিক সম্পত্তি। ২০২১ সালে নাজমুল হক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মারা যাওয়ার পর থেকেই স্ত্রী হাসিনা নিজামসহ পরিবারের সদস্যরা সাধারন মানুষের উপড় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, পশ্বি মৌজায় আরএস দাগ ৯২৪, ৯২৫ এবং ৮৫২ এর ৪৭ শতক জমি দখলে রেখেছে নাজমুল হকের পরিবার। কিন্তু ওই জমির বৈধ মালিক হিসেবে রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ভুমি অফিসে নামজারীসহ কাগজে বহাল আছেন প্রীতি টাউন নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই জমির জোত রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন, পশ্বি এলাকার কৃষ্ণচরণ দাশ, লোলিত মোহন, ইন্দ্রমোহন গং। অভিযোগ রয়েছে, নাজমুল হক তাদের মধ্যে শুধুমাত্র লোলিত মোহনের অংশ ক্রয় করে ইন্দ্রমোহন ও কৃষ্ণ চরনদের জমিসহ সীমানা প্রাচীর করে দখলে নেয়। সে সময় ক্রয় সূত্রে মালিকগং দখলের প্রতিবাদ করায় তাদের মামলা দিয়ে হয়রানী করে নাজমুল হকের পরিবার। একইভাবে পশ্বি মৌজার ৯৩১, ৯৩৩, ৯৩২ দাগে ওই মালিকদের আংশিক ক্রয় করে পুরো জমি দখলে নেয় সে। আবার একই মৌজার আপ্তাবদ্দিন ও জুলহাসগং দের ১০ বোন ৪ ভাই জমির মালিক হলেও নাজমুল হকের পরিবার শুধুমাত্র এক ভাইয়ের অংশ ক্রয় করে ১০৪ শতক জমি দখলে নেয়। সূত্র জানায়, সে দাগে নাজমুলের ২৪ শতক ছাড়া বাকি পুরো জমি অবৈধ দখলে রেখেছে । একই মৌজার আরএস দাগ ৭৮৭ এর ৬৬ শতক জমি দখলে রাখলেও সে দাগে মালিক মাত্র ৩৩ শতকের। টেকনোয়াদ্দা গ্রামের মতিন ও মজিবুরদের কাছ থেকে ক্রয় করা ১০ বিঘা জমিতে একইভাবে ভিন্ন ক্রেতা রয়েছেন দাবীদার।
ভুক্তভোগী জমি মালিক পশ্বি এলাকার বাসিন্দা আরমান মোল্লা জানান, পশ্বি মৌজার আরএস ৮৩২নং দাগে ১৮শতক জমিতে ক্রয়সূত্রে অপর অংশিদার তারেক আল মামুনসহ ভোগ দখলে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের ওই জমিতে সীমানা প্রাচীর করতে গেলে বেআইনিভাবে পার্শ্ববর্তি আরএস দাগ ৮৪৮নং দাগে ৪১ শতকের ভোগ দখলদার নাজমুল হকের স্ত্রী হাছিনা নিজাম ও তার সন্তানদের উপস্থিতিতে অজ্ঞাত আগ্নেয়াস্ত্রধারী ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীসহ ১৫ জনের অধিক লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হকের স্ত্রী অভিযুক্ত হাছিনা নিজাম বলেন, আমার স্বামী নাজমুল হক কিভাবে জমি ক্রয় করেছেন সেটা আমার জানার বিষয় না। তবে, তিনি যে জমি আমাদের দেখিয়ে গেছেন তাতেই দখলে যাবো, যাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, পুলিশের জরুরী সেবা ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে জরুরীভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিকবার ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এছাড়াও ভুক্তভোগী জমি মালিকের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সাবেক সরকারী কর্মকর্তার পরিবার যে অভিযোগে বারবার ৯৯৯তে কল দিচ্ছেন তাদের অভিযোগের সততা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।