রূপগঞ্জ বার্তা ডেস্কঃ
কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আলোচিত ধর্মীয় বক্তা আমির হামজার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার (২৫শে মে) ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে শুনানি শেষে রিমান্ডের এই আদেশ দেন।
এ সময় আসামি হামজাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন, পলাতক অপরাপর আসামিদের পূর্ণাঙ্গ নাম ঠিকানা সংগ্রহসহ গ্রেপ্তার, অর্থদাতা, মদদদাতা সনাক্তের লক্ষ্যে আসামির পুলিশ রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি আমির হামজা এজাহার নামীয় আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য মো. আল সাকিবসহ অন্যান্য কর্মীদের তার বক্তৃতার মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্ধুদ্ধ করেছে এবং অত্র হামলা করার বিষয়ে ইন্ধন প্রদান করেছে মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। আসামি আমির হামজার কথিত উগ্রবাদী বক্তব্য ইউটিউবে দেখে পূর্বে গ্রেপ্তার আসামি সাকিব আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে পুলিশের গুলিতে শহীদ হবে মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে। তিনি তথাকথিত জিহাদের নামে পবিত্র কোরআন শরিফ ও হাদিসের অপব্যাখ্যা করে উগ্রবাদী বয়ান দেয় এবং যুব সমাজকে উগ্রবাদ সমর্থনে ইন্ধন দেয় ও উদ্ধুদ্ধ করে। এ ছাড়া তার এই উগ্রবাদী বয়ানের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করে উগ্রবাদের প্রচার ও প্রসারে লিপ্ত রয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ আছে।
এর আগে সোমবার (২৪ মে) বিকেলে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের ডাবিরাভিটা এলাকার গ্রামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে হামজাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসির একটি দল।
পুলিশের দাবি, আমির হামজা ওয়াজ মাহফিলের নামে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে ছড়ানো তার বেশকিছু বক্তব্য উগ্রবাদে উসকানিমূলক, যা শুনে কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি নাশকতার মামলায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু হলে আত্মগোপনে চলে যান আমির হামজা।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, তলোয়ার নিয়ে সংসদ ভবনে হামলা চালানোর চেষ্টায় গত ৫ মে সাকিব নামে একজনকে আটক করা হয়। সাকিবকে আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় সাকিব ছাড়াও আলী হাসান ও মাহমুদুল হাসান গুনবী নামে দুজনকে আসামি করা হয়।
সাকিবের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সাকিব কথিত বক্তা আলী হাসান উসামা, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আমির হামজা, হারুন ইজহার প্রমুখের উগ্রবাদী-জিহাদি হামলার বার্তাসংবলিত ভিডিও দেখেন এবং উগ্রবাদে আসক্ত হন।
গত বছর দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর আমির হামজা ক্রমাগতভাবে মাস্ক না পরতে উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেন, ‘করোনা এসেছে ইসলামে অবিশ্বাসীদের শায়েস্তা করতে’। তিনি এমনও বলেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে কারও করোনা হবে না।’
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হলে হামজা তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘এই বক্তব্যের আগে পরে তিনি আরও অনেক কিছু বলেছেন। সেগুলো প্রচার না হওয়ায় তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।’
জানা গেছে, মুফতি আমির হামজা ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামের নামে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন। ইউটিউবে প্রকাশিত তার বেশকিছু বক্তব্য উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে। যা শুনে কোমলমতি কিশোর-তরুণরা জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের অভিযানের কারণে আত্মগোপনে ছিলেন আমির হামজা।
কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজকারী আমির হামজার জন্ম ১৯৯১ সালে।তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আল-কোরআনের ওপর অনার্স ও মাস্টার্স করেন।